মোঃ আখতার হোসেন হিরন, স্টাফ রিপোর্টার :
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা জমজমাট। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স স্বল্পতার কারণে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এ উপজেলায়। ফলে অ্যাম্বুলেন্স নিতে আসা রোগীরা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
রোগীদের স্বজনরা জানিয়েছেন, রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি মাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। এ সুযোগে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। যারা সেবার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এসব অনিয়মের কোনো প্রতিকার নেই। তারা আরো জানান, রোগীর মূমুর্ষ সময়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাননি তারা। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে নাটোর এবং রাজশাহী নিয়েছেন। এতে অর্থের সঙ্গে নষ্ট হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
বেশ কিছু রোগী ও তাদের স্বজনদের কথা অনুযায়ী তথ্য অনুসন্ধানে গেলে জানাযায়, রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার সুমন আহমেদ। এ উপজেলায় তার চাকুরির যোগদান কয়েক বছর হলো। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার হলেও আলাদা ভাবে তার একটি ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসও রয়েছে। রায়গঞ্জ উপজেলার এই সরকারি হাসপালে কোন রোগীর অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনে তাকে জানালে তিনি নানা সমস্যা ও অজুহাত দেখিয়ে তার ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসের কথা জানান। ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসের ভাড়া নিশ্চিত করার পর তিনি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সেবা দেন।
উপজেলার সচেতন মহলেরা বলছে, হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট প্রতি মাসে মাসোয়ারা পেয়ে থাকে বলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সংকট জিইয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের উন্নত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। ফলে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি সঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্সসেবা না পেয়ে প্রাণ হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে।
উপজেলার নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক বাসিন্দা বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক আমার রোগীকে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে গলাকাটা ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স থাকবে না, তা খুবই কষ্টকর বিষয়।
উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়নের শ্যামনাই এলাকার আরেক বাসিন্দা শহিনুর ইসলাম জানান, তার পিতার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের দরকার পরলে তিনি রায়গঞ্জ হাসপাতালে কর্মরত ড্রাইভার সুমন আহমেদকে জানালে তিনি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের নানা সমস্যা দেখিয়ে তার ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসের কথা জানান। কোন উপায় না পেয়ে তিনি সুমন আহমেদের ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসেই রোগীকে নিয়ে বগুড়া সজিমেকের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে বগুড়ার শেরপুরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গাড়িটি আর যেতে পারে নাই। ফলে মুমূর্ষু অবস্থায় রোগীকে অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
একই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানান, রোগীর জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম। পাঠিয়ে দিয়েছিলো ব্যক্তিগত একটা ভাঙাচোরা গাড়ি। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্বেও যদি আমাদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে হয় তবে তা দুঃখজনক।
স্থানীয়রা বলছেন, রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল। সেখানে নানা সমস্যা দেখিয়ে বেসরকারি কোন অ্যাম্বুলেন্সের সেবার নামে ডাকাতি মেনে নেওয়া যায় না। পাশাপাশি নানা সমস্যা তৈরির পেছনে জড়িত থাকা সিন্ডিকেট খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে হবে। নয়তো শতভাগ সেবা মিলবে না।
এ সমব বিষয় নিয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার সুমন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাকুরির পাশাপাশি অল্প দামে একটি মাইক্রো বাস কিনেছি। আমার ছোট ভাই পড়াশোনা করছে। পাশাপাশি দক্ষতা ও উপার্জনের কথা চিন্তা করে তাকেই কিনে দিয়েছি। সে বেশ কিছুদিন আমার এখানে থেকে ঐ গাড়িটি চালিয়েছে। হঠাৎ তার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি হলে একটা ড্রাইভার নিয়েছি। নতুন ড্রাইভারটি বর্তমানে আমার ব্যক্তিগত ঐ গাড়িটা চালাচ্ছেন। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সেবা না দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে সেবা দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি আমার অফিসের সময় অনুযায়ী সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সেবা দিয়ে থাকি। অফিসের সময়ের বাহিরেও অনেক সময় সেবা দিয়ে চলেছি।
এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আ.ফ.ম ওবায়দুল ইসলাম জানান, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি এ ধরনের অভিযোগ এখনো পাই নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবিষয়টি অবগত করা হবে।